পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আপাতত মাঠ পর্যায়ে টিকাদানের আর কোনো বিশেষ ক্যাম্পেইন হচ্ছে না। এমনকি আজ শনিবার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে টিকা দেওয়া হচ্ছে না। অথচ আজ টিকা দেওয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।
এদিকে ঢাকাসহ সিটি করপোরেশন এলাকায় মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ শেষ হলেও এর পরিবর্তে আজ থেকেই দেওয়া শুরু হবে সিনোফার্মের টিকা। যাঁরা নিবন্ধন করেও এখনো প্রথম ডোজের টিকা পাননি, তাঁদের এখন সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে জেলা পর্যায়ের নিয়মিত সব টিকা কেন্দ্রে আগের মতোই চলবে টিকাদান। এ ক্ষেত্রে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার ও মডার্নার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। বিদেশগামীদের জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতে শুধু যেসব দেশে সিনোফার্মের টিকা গ্রহণযোগ্য নয়, সেই দেশগুলোর যাত্রীদের মডার্নার টিকা দেওয়া হবে।
কভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় যুক্ত দায়িত্বশীল নিশ্চিত করেছে। এদিকে দেশে করোনাভাইরাসে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৯৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে, যার মধ্য দিয়ে ২০ দিন পর মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ জনের নিচে নামল। সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি মারা গিয়েছিল ১৯৫ জন। এরপর প্রতিদিনই মৃত্যু ২০০ জনের ওপরে ছিল। এমনকি দুই দিন ছিল সর্বোচ্চ ২৬৪ জন করে। অন্যদিকে পাঁচ দিন পর শনাক্ত আবার ১০ হাজারের নিচে নেমে এসেছে। শনাক্তের হার আরো কমে হয়েছে ২০.৮৩ শতাংশ। গত ৭ আগস্ট শনাক্ত হয়েছিল আট হাজার ১৩৬ জনের। গতকাল শনাক্ত হয়েছে আট হাজার ৪৬৫ জনের। মাঝের দিনগুলোতে শনাক্ত এর চেয়ে বেশি ছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে এই তথ্য জানা গেছে। কভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় যুক্ত সূত্র যায়, টিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিভিন্নজন নানাভাবে তথ্য জানানোর ফলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়।
এতে করে একদিকে যেমন মানুষের হয়রানি হয়, অন্যদিকে তেমনি ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পাশাপাশি পরিকল্পনাও ব্যাহত হয়। ফলে এখন ধীরে সুশৃঙ্খলভাবে টিকাদান কার্যক্রম চালানোর জন্য আপাতত মাঠ পর্যায়ের বিশেষ ক্যাম্পেইন থেকে সরে আসতে হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে পর্যাপ্ত টিকা হাতে পাওয়া সাপেক্ষে আবার এই ক্যাম্পেইনের বিষয়ে ভাবা হবে। সূত্রে জানা যায়, সরকারের টিকাকেন্দ্রিক কারিগরি নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বারবারই বয়স্কদের আগে টিকা দেওয়ার জন্য জোর দিলেও মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে সেটা ঠিক রাখা যায় না। অপেক্ষাকৃত তরুণদের ভাগেই বেশি টিকা চলে যায়। এতে করে বয়স্করা ঝুঁকিতেই থাকছেন। তা সত্ত্বেও একটি মহল বারবার টিকাদানের বয়সসীমা আঠারোতে নামানোর জন্য চাপ দিচ্ছে।
কিন্তু অন্য সব দেশেই এখনো ধীরে ধীরেই টিকার আওতা বাড়ানো হচ্ছে। কোনো কোনো দেশ বয়স্কদের সবার টিকা নিশ্চিত হওয়ার পরই শুধু কম বয়সীদের টিকা দিচ্ছে। টিকাদানের বিশেষ ক্যাম্পেইন থেকে সরে আসার বিষয়টি স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আপাতত আমরা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ক্যাম্পেইন চালাব না। তবে মহানগর ও জেলা পর্যায়ে নিয়মিত সব টিকাদান কেন্দ্রে যেভাবে টিকা দেওয়া হচ্ছিল, সেভাবে চলবে।’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কখনোই বলিনি ঢাকায় মডার্না ছাড়া অন্য কোনো টিকা দিব না। কিন্তু এমন একটি ভুল তথ্য প্রচার হওয়ায় মানুষ হুলুস্থুল পরিস্থিতির তৈরি করেছে। আমরা পরিষ্কারভাবেই বলছি, আমাদের হাতে যখন যে টিকা আসবে, সেটা দিয়েই আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাব। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকা হিসাব করে রেখে যতক্ষণ প্রথম ডোজ চালানো যাবে ততক্ষণ চলবে। ফলে মডার্নার প্রথম ডোজ আপাতত বন্ধ হলেও এখন আমাদের হাতে যেহেতু সিনোফার্মের টিকা আছে, আমরা সেই টিকা থেকেই প্রথম ডোজ চালিয়ে যাব।
যাঁরা নিবন্ধন করেও প্রথম ডোজের এসএমএস পাননি, তাঁদের পর্যায়ক্রমে এসএমএস দিয়ে ডাকা হবে। তিনি কোন টিকা পাবেন সেটি মুখ্য বিবেচ্য নয়। বরং আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যখন যে টিকা পাব সেটি মানুষকে নিশ্চিত করা।’ চীন থেকে এসেছে আরো ১০ লাখ ডোজ : গতকালও চীন থেকে সিনোফার্মের আরো ১০ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইট চীনে গিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ওই টিকা নিয়ে ফিরে আসে। আজও আরেকটি ফ্লাইট সকাল ১০টায় চীনের উদ্দেশে রওনা হবে প্রায় ২০ লাখ টিকা আনার জন্য। রাত পৌনে ১২টায় টিকা নিয়ে ঢাকা পৌঁছবে বিমানটি।
এই টিকার সঙ্গে আসছে প্রয়োজনীয়সংখ্যক সিরিঞ্জও। অন্যদিকে দেশেই টিকা উৎপাদনের পদক্ষেপ হিসেবে আগামী ১৬ আগস্ট চীনের সিনোফার্মের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি স্বাক্ষর হবে। রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন (বিসিপিএস) মিলনায়তনে এই চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে বলে জানিয়েছে চীনা দূতাবাস।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ১১ হাজার ৪৫৭ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে শনাক্ত হয়েছে ১৪ লাখ পাঁচ হাজার ৩৩৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৫২২ জন এবং মারা গেছে ২৩ হাজার ৮১০ জন।
শেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৯৭ জনের মধ্যে ১০৮ জন পুরুষ এবং ৮৯ জন নারী। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৮ জন মারা গেছে ঢাকা বিভাগে। এ ছাড়া ৫৩ জন চট্টগ্রামে, আটজন রাজশাহীতে, ১৮ জন খুলনায়, ১১ জন বরিশালে, আটজন সিলেটে, ৯ জন রংপুরে এবং ১২ জন মারা গেছে ময়মনসিংহ বিভাগে।
বয়স বিবেচনায় ১০ বছরের নিচে একটি শিশু, ১১ থেকে ২০ বছরের একজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের সাতজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের তিনজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৪৩ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের ৬২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের ৪১ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের ১৮ জন, ৯১ থেকে ১০০ বছরের তিনজন এবং ১০০ বছরের ওপরে একজন রয়েছে।
এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছে ১৫৬ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৩২ জন এবং বাসায় মারা গেছে ৯ জন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।